নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) মারা গেছেন কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ ও সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ। তার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান পরিবার-প্রিয়জন, আস্থাভাজন কর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশও করছেন অনেকে।
গত সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরে সদ্য প্রয়াত বাবাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপির বড় সন্তান আইরিন পারভীন রীনা। কানাডার একটি কলেজের ইংরেজি শিক্ষক তিনি।
তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন- “আব্বু, আমি ফোনটা সারাক্ষণ হাতে নিয়ে থাকি তোমার ফোন আসবে এই আশায়। কতদিন হয়ে গেল তুমি ফোন কর না! ফোনটা করেই তুমি বলবে ‘রিন কেমন আছো?’ এত সুন্দর করে তুমি আমায় রিন বলে ডাক! কতদিন তোমার ডাক শুনি না বাবা! পত্রিকা বা সোশাল মিডিয়ায় কেউ যখন তোমার নামের আগে মরহুম লিখে অথবা লিখে ‘মৃত্যুর সময় —’ আমি ‘মরহুম’ অথবা ‘মৃত্যু’ এই শব্দগুলো তোমার ব্যাপারে লিখলে মানতে পারি না বাবা, কোনভাবেই মানতে পারি না!! আমি ভাবি তুমি চান্দিনায় গেছ, মিটিং অথবা তোমার প্রাণপ্রিয় জনগণের মাঝে ব্যস্ত আছ, তাই আমায় ফোন করতে পারছো না।”
আইরিন পারভীন আরও লিখেছেন, “বসে বসে তোমার বক্তৃতাগুলো শুনি। তোমার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি। কত সুন্দর করে তুমি কথা বলো বাবা! প্রতিবার নামাজ পড়তে যেয়ে তোমার কবরের ছবিটা আমার চোখে ভেসে উঠে– ‘আব্বু তুমি ওখানে কেমন আছো?’ চোখের জল বাঁধ মানে না। রাতে আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে মনে হয়, আমার বাবা মাটিতে শুয়ে আছে। তখন আর শুয়ে থাকতে পারি না, উঠে যাই। বাবা তুমি কেমন আছো? আমি, আমরা কেউ ভালো নেই বাবা, তোমাকে ছাড়া কেউ ভালো নেই! মনকে বুঝাই, বেহেশতে যেয়ে তোমার সঙ্গে যখন আমার দেখা হবে, ছোট্ট খুকীটির মতো তোমার হাত ধরে বেহেস্তের বাগানে হাঁটবো তখন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।”
এমপিকন্যার এমন আবেগঘন স্ট্যাটাসে অধ্যাপক আলী আশরাফের ভক্ত ও নেতা-কর্মীরাও আবেগঘন মন্তব্য করছেন। আবার কেউবা শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অধ্যাপক আলী আশরাফ ১৯৭৩ সালে অত্যন্ত তরুণ বয়সে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১১ থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে, কুমিল্লা-৭ আসন চান্দিনা থেকে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।