প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুরের থানা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ইকবাল হোসেন (বিসিএস নন ক্যাডার), তিনি আট বছর ধরে এই পদে আছেন। স্থানীয়দের দাবী, একই পদে দীর্ঘদিন থাকার কারণে তৈরি করেছেন আলাদা বলয়। গড়ে তুলেছেন আলাদা সিন্ডিকেট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, “স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে বসেছেন৷ যেভাবে ইচ্ছে, যেভাবে মন চাচ্ছে সেইভাবে তৈরি করছেন নিয়ম নীতি। চালাচ্ছেন নিজস্ব নিয়মে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।”

স্থানীয় অনেকেরই অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বাড়ি একই উপজেলার কামারকান্দী গ্রামে হলেও সিলেট শহরে নির্মাণ করেছেন তিন তলা বিলাসবহুল বাড়ি৷ স্ত্রী-সন্তান সহ থাকেন সিলেট শহরেই। সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে অফিস ওয়ার্ক এর বাইরে ফিল্ড ওয়ার্ক করে যাতায়াত ভাড়া উত্তোলন এর নিয়ম থাকলেও তিনি এইক্ষেত্রে ব্যতিক্রম! নিজেই যেন নিজের রাজ্যের রাজা। সারামাস কোন ফিল্ড ওয়ার্ক না করেও, অফিসে বসেই যাতায়ত ভাড়া দেখিয়ে সরকারি তহবিল থেকে টাকা উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ! 5

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী অভিযোগ করেছেন, তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অন্যান্য সব কর্মকর্তাদের সবার যাতায়াত ভাড়া থেকে ৪০% কমিশন বাধ্যতামূলক তাকে দিতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলার দুর্নীতিবাজ এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে একাধিকবার তার ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করেও পাওয়া যায়নি তাকে।

অভিযোগ আছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ট্রেনিং সেশন হবার কারণে মনগড়া ভাউচার করে বিল উত্তোলন করেছেন এই কর্মকর্তা। তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ৫০ শয্যা সিট বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য রাখা টাইলস, রড, সিমেন্ট নিজের গ্রামের বাড়িতে ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও সরকারি কোয়ার্টারের স্টাফদের থেকে চাঁদা দাবি, এবং কেউ টাকা না দিলে তাকে কোয়ার্টার থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন বলেও অভিযোগ আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে সবসময় হাসপাতালে থাকার নিয়ম থাকলেও তিনি সপ্তাহে ৩/৪ দিন সিলেট শহরে স্ত্রী-সন্তানদের সময় দেন। আর সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে পরিচালনা করেন ব্যক্তিগত চেম্বার। অভিযোগ আছে, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে না পারলে একক ক্ষমতা বলে টেন্ডার বাতিল করেন সবসময়। নিম্ন মানের মেডিসিন নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের সুযোগ দিয়ে কমিশন গ্রহণ করেন।

সবশেষ গত ০৭ মার্চ কোন অনুষ্ঠান না করেই গত বছর ৭ মার্চের অনুষ্ঠানের ছবি এ বছরের বলে চালিয়ে দেয়া এবং অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ সরকারি তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে৷

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো একটি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু চালক না থাকায় আধুনিক এই অ্যাম্বুলেন্সটি একদিনের জন্যও কাজে আসেনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, ব্যক্তিগত চালক দিয়ে এই অ্যাম্বুলেন্সটিও তিনি নিজে প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। ২০০৫ সালে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি এক্সরে যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাফিলতির জন্য সেটি খোলাই হয়নি কখনো। বাক্সবন্দি থেকে এটিও এখন পুরোপুরি অচল যন্ত্রে পরিণত হয়ে আছে।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ! 6

স্থানীয় জামাত-বিএনপির পেটোয়া বাহিনী দিয়ে মারধরের অভিযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মীরা মানবন্ধনও করেছেন তাহিরপুরের ইউএইচও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের দাবি, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গত ৮ বছরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ইচ্ছামত অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। তাদের প্রশ্ন, এত অনিয়ম এর শক্তি তিনি কোথায় পান?