যে কোন সমস্যা তৈরি হয়, তার সমাধানের রাস্তা তৈরি করেই’ তবে কিছু সমস্যা সাময়িক, কিছু সমস্যা বাস্তবিক ও চিরন্তন। করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এসেছে গত মার্চের শেষ দিকে, গত ৪ মাসে বাংলাদেশের অসংখ্য জনগণ হয়ে পড়েছে বেকার, চাকুরি হারা ও অসহায় এবং নিঃস্ব। তবে করোনা একটি সাময়িক সমস্যা এটাই ধরে নিলাম, কারন এখন প্রায় ধীরে ধীরে সকল প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে, লোকজন আবার কর্মসংস্থানে বের হচ্ছে। পাবলিক বা গণপরিনহণে ভীর দেখা যাচ্ছে, রাস্তা ঘাটে অনেক গাড়ি চলছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, বাস্তবিক ও চিরন্তন যে সমস্যা বাংলাদেশে আর তা হচ্ছে মানুষের নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা ও অমানবিক আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি। যা প্রতিনিয়ত গণপরিবহনেই দেখা যায়। গণ পরিবহনের বেশির ভাগ ড্রাইভার ও কন্ট্রাক্টর (সুপারভাইজার) নূন্যতম শিক্ষা জ্ঞান ও মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রণয়ন না থাকায় তারা প্রতিনিয়ত বড় বড় নেতা কিংবা কিছু মন্ত্রী বা এমপির নাম করে, তাদের দাপট নিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মতো গাড়ি চালাচ্ছে ও যাত্রীদের ভাড়া সংক্রান্ত হয়রানিসহ যাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ, যাত্রীদের সাথে বাজেভাবে তর্ক ও মারামারি পর্যন্ত করে বসে তারা। অধিকাংশ নারীরা এসব গণপরিবহনে একদম অনিরাপদ। নারী বান্ধব আচরণ ও সহযোগিতা বিষয়ক কোন ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ মনে হয় এদের করানো হয়না। নয়তো বেপরোয়া আচরণ ও নারীর সাথে যাত্রাপথে এরা যে পরিমান রাফ ব্যবহার করে, তাতে তাই প্রকাশ পায়।
এবার আসি কিছু ছোট ছোট বাস্তব সত্য অভিজ্ঞতা নিয়ে, করোনা কালে গত ৪ কি ৫ মাসে সকলে বেকার থাকায় হাতের লাজুক অবস্থা। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত, যারা গণপরিবহনে যাতায়াত করে, নিজেদের কর্মসংস্থানের কাজে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও যাওয়া আসা করে, তারা এই বাস্তবিক বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করতে পারবে। বাসের সেটিংস এ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে দুই সিট একজনকে দেয়া হচ্ছে, দুই সিটের ভাড়াও একজনকে দিতে হচ্ছে। Social Distance এর নামে গণ পরিবহন এই সময় বিজনেস লুফে নিচ্ছে, অল্প সময়ে অল্প যাত্রি তুলে অধিক মুনাফা অর্জন করছে, যে বাসে যাত্রীর আসন সংখ্যা ৪০ ছিলো, সেখানে ২০ জনের কাছ থেকে তা উসুল করা হচ্ছে। এতে কি হচ্ছে, এক শ্রেনীর মানুষ অল্প সময়ে, অল্প পরিশ্রমে, অল্প কথায় বেশি লাভবান হচ্ছে, আর অন্যদিকে খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণ চাকুরী, ইন্টারভিউ দিতে, কিংবা এই খানে সেইখানে কাজ থাকার কারনে ডাবল ভাড়া দিয়ে অসহায় থেকে আরো অসহায় হয়ে পড়ছে। কেউ এক সিটের ভাড়া দিতে চাইলে, কিংবা তার সামর্থের মধ্যে দুই সিটের ভাড়া না থাকায়, তার সাথে যা ইচ্ছে তাই আচরণ করা হচ্ছে, বাকী লোকজন স্তব্ধ, এই হচ্ছে সমাজব্যবস্থা, এই হচ্ছে সুবিধাভোগীদের মানবিকতা।
ঢাকা, গাজীপুরে যেসকল যান চলাচল করে, বিশেষ করে বসুমতি, প্রজাপতি, অনাবিল, তুরাগ, এই গাড়িগুলো অত্যন্ত ফিটনেস বিহীন গাড়ি, সিট প্লানিং ভালো না, অথচ এই গাড়িগুলো দিনে দুপুরে কিংবা রাতে একতরফা বিজনেস করে যাচ্ছে মানুষের কাছ থেকে ভাড়া অধিক নিয়ে। এছাড়া দূর পাল্লার বড় বড় বাসগুলোও সার্ভিস ভালো দিলেও, সিট প্লানিং ভালো থাকলেও ডাবল ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের একটা সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে। সামাজিক দূরত্বতা দিয়ে তারা করোনা আটকানোর কথা চিন্তা করলেও, নাই কোন জীবানু নাশক স্প্রে, এছাড়া আরো কিছু ত্রুটি রয়েছে।
বিভাগীয় বা সকল রাস্তাঘাটে এখন এমনো অনেক বাস চলতেছে যেখানে ধাক্কাধাক্কি করে কিংবা দুই সিটেই দুজনও বসে যাচ্ছে এমনো আছে, তাহলে নীয়ম নীতি কি সবার জন্য না? হয় সকল গাড়ির সিস্টেম ও ভাড়া একটা লিমিটেড করা হোক, নয়তো দূর্ণীতি যারা করছে, যারা অনিয়ম করছে তাদের শাস্তি দেয়া হোক।
কোন নারী যদি ভাড়া সংক্রান্ত কথা বলে, অথবা তাকে টিজ করা হচ্ছে এগুলোর প্রতিবাদ করে, তখন ঐ নারীকে বাজে ভাবে কিছু কন্ডাক্টর কমেন্টস করে নামার সময় ও বাজে ইশারা বা হাত নাড়াচাড়া করে। যা সত্যি একটা নারী হয়ে এহেন আচরন সহ্য করার মতো না, মনে চায় তখনি তাদের ইচ্ছে মতো যদি শাস্তি বা শিক্ষা দিতে পারতাম। কিন্তু গাড়িগুলো চলে যায় অতিদ্রুত, এই জায়গায় আবারো নারী দূর্বল হয়ে পড়ে, নিজের মনে কিছুটা গড়গড় করে, চোখদুটো জলে ভিজিয়ে আবার কাজে ছোটে। প্রতিনিয়ত গণপরিবহনে যারা বাইরে কাজকর্ম করে, জীবিকার তাগিদে ছুটতে হয়, প্রতিনিয়ত তারা যুদ্ধ করছে এমন পরিস্থিতির সাথে।
আমার কিছু মতমত, এই প্রেক্ষিতে অতিদ্রুত ডাবল ভাড়া সিস্টেম বাতিল করা হোক, এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ভাড়া চাওয়া, বাসে মেয়েদের উত্যক্ত করা এবং তাদের সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলা বন্ধের উপর আইন জারি করা হোক ও দ্রুত সকল সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা হোক। এই দেশ তোমার, এই দেশ আমার, সবিশেষ মুজিবের। তাই দেশের মান রাখতে সকলকে আরো মানবিক হওয়ার উদাত্ত আহ্বান, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এই শ্লোগান কে সামনে রেখে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সকলে একজোট হয়ে কাজ করে বাংলাদেশ কে করি সমৃদ্ধ ও সম্মানিত।
লিখেছেন: সাহিদা আক্তার স্বর্ণা, উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মী।