পঞ্চাশ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বাংলাদেশ চর্চা (তৃতীয় খণ্ড) বইয়ের সম্পাদক, ইতিহাসের অধ্যাপক, গবেষক মুনতাসীর মামুনসহ চার জনের বিরুদ্ধে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের করা মানহানির মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।

সেই সঙ্গে মামলায় নারাজি দিয়ে বিচারিক আদালতে মুনতাসীর মামুনের আবেদন খারিজের আদেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। মুন্নুজান সুফিয়ানকে সেই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নিম্ন আদালতের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে মুনতাসীর মামুনের রিভিশন আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দস ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

রিভিশন আবেদনের পক্ষে হাই কোর্টে শুনানি করেন আইনজীবী এ কে রাশেদুল হক।

মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ চর্চা-৩’ বইটি ২০০৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশি হয়। ১৫০ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম (দোতলা), ঢাকা ১০০০ ঠিকানায় প্রকাশক রেহানা হক বইটি প্রকাশ করেন। বইটির স্বত্ত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ চর্চাকে।

ওই বইয়ে লেখক মো. আবুবকর সিদ্দিকীর ‘মুক্তিযুদ্ধে দৌলতপুর: একটি সমীক্ষা’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে শান্তি কমিটির সদস্যদের নামের তালিকায় ৩৬ নম্বর ক্রমিকে উঠে আসে মুন্নুজান সুফিয়ানের বাবা ‘মৃত মোসলেম বাওয়ালী’র নাম।

বিষয়টি নজরে আসার পর তথ্যের সত্যতা জানতে চেয়ে ২০১৮ সালের ১ জুলাই বইটির সম্পাদক মুনতাসীর মামুনের কাছে উকিল নোটিস পাঠান মুন্নুজান সুফিয়ান। তার জাববও দেন মুনতাসীর মামুন।

দারপরও তথ্যের সত্যতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই বছর ১৯ জুলাই আবার মুনতাসীর মামুনকে উকিল নোটিস দেন মুন্নুজান সুফিয়ান। নোটিসে এ তথ্য প্রকাশের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়।

পাশাপাশি যে লেককের প্রবন্ধে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে মুন্নুজান সুফিয়ানের বাবার নাম উঠে এসেছে, সে লেখকের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয় নোটিশে।

কিন্তু মুনতাসীর মামুন অস্বীকৃতি জানালে গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির মামলা করেন প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান।

পরে গত বছর ২২ জুলাই তামাদি আইনের ২৪ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে মানহানির মামলায় নারাজি দেন মুনতাসীর মামুন। চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি আবেদনটি খারিজ করে দেয় আদালত।

ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে মুনতাসীর মামুন গত ২৬ আগষ্ট হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। সেই রিভিশন আবেদনের শুনানির পরই উচ্চ আদালত মুন্নুজান সুফিয়ানের করা মানহানির মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করল।

মুনতাসীর মামুনের আইনজীবী এ কে রাশেদুল হক বলেন, তামাদি আইনের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করতে হয় মানহাকিকর বক্তব্য প্রকাশের এক বছরের মধ্যে।

বাংলাদেশ চর্চা/৩ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মুন্নুজান সুফিয়ান মামলাটি করেছেন ১৪ বছর পরে।

“আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বইটি মুনতাসীর মামুনের সম্পাদিত বই। বইটিতে লেখক মো. আবুবকর সিদ্দিকীর ‘মুক্তিযুদ্ধে দৌলতপুর: একটি সমীক্ষা’ শিরোনামের প্রবন্ধে ‘মৃত মোসলেম বাওয়ালীকে’ শান্তি কমিটির সদস্য দেখানো হয়েছে, যিনি মুন্নুজান সুফিয়ানের বাবা।

“এখন কথা হচ্ছে, বাবার মানহানির কারণে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য তার সন্তান মানহানির মামলা করতে পারেন কিনা। কারণ প্রকাশিত বইয়ে মুন্নুজান সুফিয়ান সম্পর্কে মানহানিকর কোনো বক্তব্য বা তথ্য আসেনি।”