করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর এলাকা, চকরিয়ার পৌর এলাকা ও ডুলহাজারা ইউনিয়ন এবং উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের কোটবাজার স্টেশনের আশাপাশের ৩ টি ওয়ার্ডকে নতুন করে ‘রেড জোন’ ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করেছে প্রশাসন। এর আগে শনিবার থেকে কক্সবাজার পৌর এলাকাকে দেশের ‘প্রথম রেড জোন’ ঘোষণা করে ফের লকডাউন করা হয়েছিল।


রোববার বেলা ১১ টায় কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ‘রেড জোন’ ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করার এ তথ্য জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও জেলা করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সমন্বয়ক মো. আশরাফুল আফসার।


অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলার কয়েকটি এলাকাকে ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে প্রশাসন এসব এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করেছে।
আশরাফুল বলেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বিবেচনায় প্রশাসন কক্সবাজার পৌর এলাকাকে দেশের প্রথম রেড জোন ঘোষণা দিয়ে শনিবার সকাল থেকে লকডাউন করেছিল। পাশাপাশি এ নিয়ে প্রশাসন জেলার আরো কয়েকটি এলাকাকে ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

“প্রাথমিকভাবে এসব ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে চকরিয়া পৌর এলাকা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়ন, টেকনাফের পৌর এলাকা এবং উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের কোটবাজার স্টেশন সংলগ্ন আশাপাশের এলাকার ৩ টি ওয়ার্ড।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, “ রোববার সকাল থেকে জেলার ঝূঁকিপূর্ণ এসব এলাকাকে নতুন করে রেড জোন ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করেছে প্রশাসন। আগামী ২১ জুন রাত ১২ টা পর্যন্ত পর্যন্ত রেড জোন ঘোষিত এসব এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে। ”


“ লকডাউনের আওতায় থাকা এসব এলাকায় ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ সবধরণের সভা-সমাবেশ বা গণজমায়েত বন্ধ থাকার পাশাপাশি কাঁচা বাজার, মুদির দোকান, মার্কেট ও বিপণী বিতান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। বন্ধ থাকবে ব্যক্তিগত ও যে কোন ধরণের গণপরিবহন। এসময় মানুষকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশনাও রয়েছে। ”


আশরাফ বলেন, শুধুমাত্র ফার্মেসিসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন, কোভিড-১৯ মোকাবিলার কাজে ব্যবহৃত গাড়ী চলাচল করতে পারবে। এছাড়া সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খোলা থাকবে কাঁচা বাজার ও মুদির দোকানসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
রেড জোন ঘোষিত এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে তৎপর থাকবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।


আশরাফ জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের জেলার ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোকে রেড ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করার বিষয়ে স্ব-স্ব এলাকার ইউএনওরা শনিবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছেন।
এদিকে কক্সবাজার পৌর এলাকায় লকডাউন শুরুর দ্বিতীয়দিন রোববার সকাল থেকে প্রধান সড়কসহ উপসড়ক ও অলিগলিতে প্রথমদিনের তুলনায় বেশী সংখ্যক যানবাহন ও মানুষের চলাচল শুরু হয়েছে। খুলেছে বেশ কিছু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাস্তার ফুটপাতে বসেছে হকারিরাও।


এছাড়াও রাস্তায় বের হওয়া মানুষদের দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করতে।
তবে লকডাউনের নির্দেশনা মত কাঁচা বাজার ও মুদির দোকানসহ কিছু নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার প্রশাসনিক নির্দেশনা থাকায় লকডাউনের দ্বিতীয়দিন রোববারে সড়কে মানুষের চলাচল বেড়েছে বলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কিন্তু কক্সবাজার পৌর এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে লকডাউনের আওতায় প্রশাসনের বিধি-নিষেধ অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তেমনটা তৎপরতার দেখা মিলেনি পুলিশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের। তবে শহরের কয়েকটি স্থানে প্রশাসনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের কিছুসংখ্যক সদস্যকে তৎপর দেখা গেছে। এতদসত্বেও পুরোপুরি লকডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।


এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফ বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা মত রোববার লকডাউনের কিছুটা শীতলতা থাকায় রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত। তারপরও লকডাউনের নির্দেশনা অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে সোমবার থেকে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে জানান তিনি।


এদিকে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলায় শনিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৯৬৪ জন। এদের মধ্যে দেশে ‘প্রথম রেড জোন’ ঘোষিত কক্সবাজার পৌর এলাকার ৩১৭ জন। জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌর এলাকার রয়েছে ১৩ জন।