করোনা ভাইরাসে থমকে গেছে সারাদেশ। সারা বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে জ্যামিতিক হারে দেশব্যাপী বাড়ছে আক্রান্তের হার। চট্টগ্রামে এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। করোনার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানা ভাবে সাধারণ জনগনকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে কিছু অসাধু সিন্ডিকেট। কিন্তু এই ক্রান্তি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ভূমিকায় পঞ্চমুখ সাধারণ জনগন। নীচে তেমনই একটি গল্প তুলে ধরা হলো। লেখাটি ছাত্রলীগ নেতা শরীফুল ইসলাম মিয়াজী’র টাইমলাইন থেকে নেওয়া-
‘বেচেঁ ফেরার গল্প: প্রথম ছবির ছেলেটি চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ অধ্যয়নরত। সে পাশাপাশি ফুড পান্ডায় অনলাইনের ফুড ডেলিভারির কাজ করে। গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর মুন্সিপুকুর পাড় এলাকা থেকে তার ফোনে একটি খাবার ডেলিভারির অর্ডার আসে। ডেলিভারি দিতে গেলে তাকে অর্ডার কারিদের একটি চক্র মোবাইল চোর সম্বোধন করে তাদের গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়।
সকাল ১১টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত প্রচুর প্রহার করে। এবং জোরপূর্বক তার থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করে। ছেলেটি বারংবার তাদের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এবং সে একজন পবিত্র কোরআনের হাফেজ বলে রেহাই চায়।কিন্তু পাষণ্ডরা এতে আরও বেশি প্রহার করে এবং বলে নগদ ৫০০০০ টাকা মুক্তিপন দিতে পারলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়। একপর্যায়ে ছেলে তার মাকে ফোন করে টাকা নিয়ে আসতে বলে। মা ছেলের কান্নার শব্দ শুনে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ছেলের বাসা আমার পাশেই। সে সুবাধে ছেলের মা আমার কাছে কিছু টাকা ধার চাইতে আসে।উনার চেহারা পুরোপুরি ভীষন্ন,তখন আমি টাকার কি প্রয়োজন জানতে চাইলে উনি কান্নাজড়িত কন্ঠে সব বলতে থাকে এবং বলে টাকা না দিলে তারা নাকি উনার ছেলেকে মেরে ফেলবে বলছে।
আমি তাৎক্ষণিক উনাকে সাথে নিয়ে ছবির দ্বিতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ পাঁচলাইশ থানার সাব ইন্সপেক্টর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মোমিন ফরহাদ ভাইয়ের কাছে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দেই। অতি অল্প সময়ের মধ্য উনি পুরো প্লান তৈরি করে এবং জিম্মিকারীদের সাথে ফোনে কথা বলেন। তাদের বলেন, ‘আমি সাকিবের বড় ভাই টাকা নিয়ে আসতেছি অল্পসময়ের মধ্য, আপনারা দয়া করে আমার ভাইটিকে আর মারবেন না। তখন তারা তাদের ঠিকানা দেয় এবং বলে টাকা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি আসবেন তত আপনার ভাইয়ের মঙ্গল।
মাত্র মিনিট কয়েক ব্যবধানে চৌকস এই অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশের সিভিল টিম কৌশলে টাকা নিয়ে প্রথমে দুইজন সেখানে পৌছায়। টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে সেখান থেকে একজন মহিলা ও দুটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল থেকে দুইজন অপরাধী পালিয়ে যায়।ছেলেটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রধান করা হয়। যারা অনলাইনে বিভিন্ন পন্য ও খাবার ডেলিভারী দেন তারা আশাকরি এই পোস্টটি পড়ার পর অধিকতর সতর্ক হবেন।
পাঁচলাইশ মডেল থানার চৌকস অফিসার জনাব মোমিন ভাই, মামুন ভাইসহ টিমে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ এই দুর্যোগকালীন সময়ে নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে রেখে খুব দ্রুত সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায়। আপনাদের বুদ্ধিমত্তায় একটি তাজা প্রান বেচেঁ ফিরল তার মায়ের কাছে। ‘পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আবুল কাশেম ভূঁইয়া এই অপহরণকৃত ছেলের খবর মুঠোফোনে পান। তাৎক্ষণিক তিনি এস আই আব্দুল মমিন ফরহাদকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।
এই উদ্ধারের গল্প বলতে গিয়ে পাঁচলাইশ থানার সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল মোমিন ফরহাদ মুঠোফোনে জনতারমুখ’কে বলেন, আজ হঠাৎ দুপুরে অপহরণকৃত ছেলেটির খবর শুনতে পেয়ে ওসি স্যার আমাকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। তাৎক্ষণিক ওসি স্যারের নির্দেশে আমি আমার টিম নিয়ে অতিদ্রুত ছেলেটিকে উদ্ধার করি এবং ঘটনাস্থল থেকে একজন মহিলা ও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে আটক করি। এতে আমরা অত্যন্ত সুকৌশলে প্ল্যান সাজিয়ে জিম্মিকারীদের আটক করতে সক্ষম হই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ জনগনের বন্ধু। করোনার এই ক্রান্তিকালে পুলিশ আপনাদের সেবায় দিন রাত নিয়োজিত আছে। সাহস করে এগিয়ে আসুন, পাশে থাকবে বাংলাদেশ পুলিশ।