পাকিস্তান শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর সাথে একই সেলে তিন মাস কারাবন্দী ছিলেন সদ্য প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের প্রধান ছিলেন কামাল লোহানী, বেতারে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের খবর এসেছিল তাঁর কণ্ঠে। গতকাল নানা রোগের পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮৬ বছর বয়সে শনিবার চিরবিদায় নিলেন তিনি।
১৯৬২ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ২৬ নাম্বার সেলে বঙ্গবন্ধু ও কামাল লোহানী একসাথে ছিলেন সাড়ে তিন মাস। বন্দীদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল সেলে। লুডু, দাবা, ক্যারম, কার্ড। তাঁরা একসাথে খেলতেন। সেলের সামনে খোলা জায়গায় খেলতেন ভলিবল। বঙ্গবন্ধু ও লোহানী একই দলে খেলতেন। লোহানী ক্যাপ্টেন, বঙ্গবন্ধু মিডলম্যান। সেসময় বঙ্গবন্ধু লোহানীকে ক্যাপ্টেন বলে সম্বোধন করতেন৷ আর লোহানী ডাকতেন লিডার। বঙ্গবন্ধু ঠাট্টা করে বলতেন, ‘তুই আমাকে লিডার ডাকিস না। আমি জানি তোর লিডার কে।’
কামাল লোহানী তখন পাবনা জেলা স্কুলে শেষ বর্ষের ছাত্র, শুরু হয় ভাষার জন্য আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে নুরুল আমিনসহ মুসলিম লীগ নেতাদের পাবনা আগমন প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাকে জেলেও যেতে হয়। মুক্ত হতে না হতেই আবার ১৯৫৪ সালে গ্রেফতার হন কামাল লোহানী। সেই সময় তিনি কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে দীক্ষিত হন। এর পরের বছর আবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে একই কারাকক্ষে তার বন্দিজীবন কাটে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি যে খবরটি শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল, সেই বিজয়ের খবরটি এসেছিল কামাল লোহানীর কণ্ঠে। তিনি তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের প্রধান। বেতারে কামাল লোহানী বলেছিলেন, “আমরা বিজয় অর্জন করেছি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে।”