চাঁদপুরে গতকালের ‘টক অব দ্যা টাউন’ ছিলো, কে এই অটো চালক? লোভ সংবরণ করে যে ফিরিয়ে দিয়েছে নিজের ইজিবাইকে পাওয়া ৬১ লাখ টাকা!
নাম সজিব সর্দার, বয়স মাত্র ১৮। দারিদ্রতার চাপে পিষ্ট সজিব বই-খাতা-কলমের সাথে সম্পর্ক ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছে স্টেয়ারিং। জীবিকার তাগিদে কোমল হাতে সামলায় ইজিবাইক। থাকে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার মধ্যশ্রীরামদী এলাকায়, বাবা দিনমজুর দেলোয়ার সরদার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলেন বঞ্চিত হলেও, নৈতিক শিক্ষাটা ঠিকঠাক পেয়েছে এই কিশোর। ছেলেটির সততায় চাঁদপুরের বিকাশ এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল ফিরে পেয়েছেন নিজেদের ভুলে অটোরিকশায় ফেলে যাওয়া ৬১ লাখ টাকা।
ঘটনার আদ্যোপান্ত ঘেটে জানা যায়, রোববার (২১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় বিকাশ এজেন্ট কর্মী মাসুদ হোসেন শহরের ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ৬১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে নেমে ব্যাগভর্তি সেই টাকা নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠে শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় এসে নামেন। তখন ভুলক্রমে তিনি অটোরিকশাতে টাকাগুলো রেখেই মাসুদ নেমে পড়েন। সেখানে বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে মাসুদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এরপর তারা দুইজন ফরিদগঞ্জে কাজে চলে যান। প্রায় আধ ঘন্টা পর বুঝতে পারেন যে টাকার ভ্যাগ অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন।



পড়িমরি করে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তারা। সেখানকার নির্মাণাধীন একটি ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, অটোরিকশায় থেকে মাসুদ নেমে যাবার পর অটোরিকশা চালক সজিব প্রায় আধঘন্টা সেখানে অপেক্ষা করেন। এরপর টাকার ভ্যাগটা নিজের কাছে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাবার দৃশ্য ধরে পরে ক্যামেরায়। ভিডিও ফুটেজ দেখে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ছুটে যান তারা। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ।
সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সজিবের ভাষ্যমতে, রোববার সকাল ১১ টায় খালি গাড়ি নিয়ে পৌরসভার সামনে দিয়ে যাবার সময় তিন যাত্রি উঠেন। তারা শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোড জোড়পুকুর পাড় যায়। সেখানে গিয়ে যাত্রী তিনজন নেমে ভাড়া দিয়ে নেমে যায়। কিন্তু নেমে যাওয়া সময় একটা লালব্যাগ সিটে ফেলে রেখে যায়। ব্যাগসহ গাড়িটি নিয়ে সজিব প্রায় আধা ঘন্টা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, কেউ না আসায় গাড়ি নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে দুলাভাই’কে ঘটনাটি জানিয়ে, ব্যাগটি ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আলাপ করে।
বিষয়টি প্রতিবেশী চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের অফিস সহকারী বাদল বেপারিকে জানায় সজিবের দুলাভাই। বাদল ঘটনাটি চাঁদপুর মডেল থানা অফিসার ইনর্চাজ নাসিম উদ্দিনকে জানালে, থানা ও পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ সজীবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার গ্যারেজ থেকে সেই টাকা থানায় নিয়ে আসে। এবং মালিকের হাতে তুলে দেয়।
আরও পড়ুন-
- বাংলাদেশকে ‘খয়রাতি’ লিখেছে ভারতীয় গণমাধ্যম
- দীর্ঘ ৩৯ দিনের যুদ্ধ ও করোনা জয়ের গল্প…
- ডাক্তার কি সম্মানের জিনিস?