আমার লেখালেখির কারণে প্রায়ই আমার কলেজের প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বিব্রত হতে হয়। আমিও স্যারের অফিস থেকে কল আসলেই ভয় পাই, না জানি আবার কে উনাকে প্যারা দিচ্ছে। আজকেও ফোন আসল। স্যারের রুমে যেয়ে দেখি ভিন্ন কাহিনী!
স্যার প্রথমেই শর্ত দিলেন কোনভাবেই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লেখা যাবে না, রাজি হলাম। আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে পকেট থেকে ১০০ টাকার একটি বান্ডিল বের করে বললেন, “রাস্তায় কোন বুড়া রিকশাওয়ালা দেখলেই ১০০ টাকা করে দিবি”। আমি বললাম, “স্যার আমি ইহকালে নিজে যেমন কোন দান খয়রাত করি নাই, আরেকজনের হয়েও না। সকালে ১৫০ টাকা ভাড়া দিতেই আমার কষ্ট লাগছে। তাছাড়া ১০০ জন রিকশাওয়ালা, তাও আবার বুড়া, কোথায় পাবো?”
ত্রাতা হিসেবে নাজিল হল আমার বিভাগীয় প্রধান। বললাম, আপা বুদ্ধি দেন। উনি বললেন, আমার গাড়িতে উঠো। যেতে যেতে দিয়ে দিব”। ওদিকে আবারও প্রিন্সিপ্যাল স্যারের হুঁশিয়ারি, নো নেইম মেনশন, নো ফটোসেশন, নো ফেসবুক।” কলেজ গেইট থেকে মিরপুর পর্যন্ত রিকশাওয়ালাদের ১০০ টাকা করে দিতে দিতে আসলাম। আগারগাঁও মোড়ে কয়েকজনকে দিয়ে তালতলা এসে যখন একজনকে ডাক দিলাম, সে বলল, “স্যার আমারে একবার দিছেন তো, অন্য আরেকজনরে দেন”!
প্রিন্সিপ্যাল স্যার নিজে ফেসবুক ব্যবহার করেন না। তারপরও যদি জানেন আমি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লিখেছি, দয়া করে রাগ করবেন না স্যার। আপনার মহানুভবতা প্রচারের জন্য ফেসবুক লাগে না, ফটোসেশন লাগে না, পরিচিতরা সবাই এমনিতেই জানে। কিন্তু ঐ রিকসাওয়ালার মহানুভবতার কথা আমাকে বলতেই হবে। এগুলোই আমাদের লেখালেখির রসদ। এক বুড়ো ১০০ টাকার দুইটা নোট ধরে কেঁদে দিয়েছে, পিছনের সিটে বসা আমার বিভাগীয় প্রধানের চোখও দেখি ছলছল। আমার মত নিরস মানুষের জন্য একটা অদ্ভুত অবস্থা।



প্রিন্সিপাল স্যার এ বিষয়ে লিখতে মানা করে দিলেও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ যে অনেক আগে থেকেই সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে, সেটা লিখতে বলছেন। এই বেসিনে প্রথম হাত ধোয়া লোকটাও ছিলাম আমি, যদিও সেই হাত ধোয়ার ছবি কেউ তুলে রাখে নাই।
সেদিন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার সংবাদটি পড়ার পর থেকে কিছু ভালো লাগছে না। বুড়া রিকশাওয়ালারা রোদের মধ্যে যাত্রী ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগামী এক মাস যদি সরকার এবং জনগণ দুই পক্ষই একই সাথে, একই শক্তিতে করোনার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়ে, তাহলে আমাদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। (ফিচার্ড ইমেজে ব্যবহৃত ছবিটি প্রতিকি ও সংগ্রহীত)
লিখেছেন- ডা. জাহিদুর রহমান,
ভাইরোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ।
আরও পড়ুন-
- করোনাভাইরাস; একজন বাড়িওয়ালার বিরল মানবিক সিদ্ধান্ত!
- ত্রাণ বিতরণ করবে শুধু সেনা ও নৌবাহিনী বিষয়টি ‘গুজব’!
- সবজির দামে সামঞ্জস্যতা আনতে বিদ্যানন্দ’র অভিনব উদ্যোগ!
- লকডাউন’ পাঁচ লাখ মানুষকে খাবার পৌঁছে দিবে বিদ্যানন্দ!