প্যারামেডিকরা আজকে স্রেফ জানিয়ে দিয়েছে যে, কোন কার্ডিয়াক এরেস্ট বা করোনা ছাড়া অন্য যে কোন রোগীর পেছনে তারা ২০ মিনিটের বেশি সময় নষ্ট করবে না। ৯০% প্যারামেডিক ইমার্জেন্সি কলের জন্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে বাসায় যায় না। কেউ হয় গাড়িতে, নয়তো কেউ পুলিশ প্রিসিঙ্কট বা হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমের আশে পাশে চেয়ারে ঘুমায়। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতায় অনেকে সাইক্রিয়াটিস্ট এর পরামর্শ নিচ্ছে, যদিও ম্যানহাটনের প্রচুর হোটেল মেডিকেল কর্মীদের জন্যে উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু স্রেফ সময় নাই তাদের কাছে।
গ্রোসারিগুলিতে তীব্র লাইন, এক দোকানে এক সাথে দশ জন বা পাঁচ জনের বেশি এলাউ করছে না আয়তনের উপর ভিত্তি করে। যে কোন দোকানে দুইটাকার দুধ কিনতে গেলেও এখন গুনতে হবে অন্তত এক ঘন্টা।
রাস্তাঘাটে কেউ কফ বা কাশি দিলেও লোকজন তাকে সন্দেহবশত ডিটেইন করে হট লাইনে ফোন দিচ্ছে।
ইতালির মত রোগীর বয়স আর মেডিকেল হিস্ট্রির উপর প্রায়োরিটি দিয়ে ডাক্তার-নার্সরা জাজমেন্ট কল দিচ্ছে- কে বাঁচবে বা কে মরবে সেটার। যদি আপনার বয়স ৬০ এর উপর হয় আর আপনার হার্টের প্রবলেম বা ফুসফুসের গুরুতর সমস্যা থাকে, মোস্ট প্রোবাবলি ভেন্টিলেটর বা অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনি প্রায়োরিটি পাবেন না, পাবে আপনার পাশের অনূর্ধ্ব চল্লিশ রোগী যার বাচার চান্স বেশি । জানি এটা শুনতে খারাপ লাগছে, কিন্তু ডেইলি ১০০০০ করে রোগী বাড়ছে এখানে আসলেই জাজমেন্ট কল ছাড়া উপায় নাই।
রেগুলার হাসপাতাল বলে আর কিছু নাই। সব হাসপাতাল’ই আই সি ইউ। যদি করোনা ছাড়া অন্য এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে আসেন, বলতে হবে স্রেফ আপনার ভাগ্য খারাপ।
মানুষজন আমরা সবাই দরজা জানালা বন্ধ করে রেডিও টিভি খুলে নিশ্চুপ বসে আছি। যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, একটু পর ই সাইরেন বাজবে, জার্মান বম্বিং হবে। কে বাঁচবে বা কে মরবে ঠিক নাই।
এখন পর্যন্ত নিউইয়র্ক শহরে রোগী এক লক্ষ ত্রিশ হাজারের মত। প্রতিদিন দশ থেকে বারো হাজার যোগ, যার অধিকাংশই আমার শহর নিউইয়র্ক সিটিতে। আশংকাজনক ভাবে তরুন রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে বয়স্কদের তুলনায়। মাঝে রিকভারি রেট বাড়লেও যেহারে রোগী বাড়ছে, তার তুলনায় রিকভারি খুব বেশি কম।
স্টেট পাগলের মত ডাক্তার-নার্স খুঁজছে, গভর্নর আজ বললেন চান্স আছে যে ইকুইপমেন্টের আগে ডাক্তারের সংকট হবে। স্টেটের কাছে সোমবার চালানোর মত ভেন্টিলেটর আছে, ওয়াশিংটনের কাছে চাওয়া হলে ট্রাম্প স্রেফ জানিয়ে দিয়েছে তাদের হাতে নাই।
এপর্যায়ে সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে যে, বোধহয় এটাই শেষ। আমি হাল ছাড়া মানুষ না, জীবনের কোন বাঁধাই আজ পর্যন্ত মানিনি। কিন্তু সত্যি বলতে আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছে এভাবে চলা সম্ভব না।
অনেস্টলি আমার সিটিতে থাকা বন্ধুদের বলব, প্রিয় মানুষদের সাথে কথা বলা শুরু করতে আর যা ভাল খাবারদাবার বা যাকে যা বলার ছিলো মনে বলে ফেলতে। If you live in New York city you might not get a second chance!
নিউইয়র্ক থেকে লিখেছেন সালমান খান নিবিড়
আরও পড়ুন-
- “ফুফা স্ট্রোক করে মারা গেছেন, করোনায় নয়”
- সুস্থ হয়নি নতুন কেউ, করোনা শনাক্ত আরও ৩৫ জন!
- বিদ্যানন্দ’র এবারের উদ্যোগ ‘বিনামূল্যের বাজার’!