টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া..চলমান এক আবেগ গোটা বাংলার। যে আবেগ ছুয়ে গেছে সারা বিশ্বকে। দুনিয়ার এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। গ্রেটরা এক বাক্যে বলেছেন মাশরাফী তুমি সেরা, তোমার নেতৃত্বে গর্জে উঠে বাংলাদেশ। সত্যিইতো বদলে যাওয়া বাংলাদেশের কারিগরতো তুমিই।
সিদ্ধান্তটা আজ সকালেই নিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। অবসরের বিষয়ে প্রথম জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে। এরপর পরিবারকে। এরপর মাঠে এসে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ও সতীর্থদের জানান শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচটিই হবে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর শেষ ম্যাচ।
সংবাদ সম্মেলনে এসেই নিজের মোবাইল ফোনে কী যেন দেখলেন একবার। এরপর মোবাইল পকেটে পুরে রাখলেন। একবার তাকালেন মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের দিকে। যার হাতে ছিল মাশরাফির বক্তব্য লেখা একটি কাগজ। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কাগজ পড়ে নিজের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন মাশরাফি।
লিখিত বক্তব্যটি ছিল সংক্ষিপ্ত। মূলত তাঁর চলার পথের সঙ্গীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাই জানিয়েছেন মাশরাফি। ২০১৪ সালের শেষ দিকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনেই অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন তিনি। উল্লেখ করতে ভুলেননি বাংলাদেশের সাবেক এই লঙ্কান কোচের কথা। স্টিভ রােডস, রাসেল ডমিঙ্গো তো ছিলেনই। মাশরাফি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সংক্ষিপ্ত সময়ে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে থাকা খালেদ মাহমুদকে জানিয়েছেন ধন্যবাদ।
মিডিয়ার যারা আছেন, সবাই সহযোগিতা করেছেন আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
সবশেষে সমর্থকেরা, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ, আপনাদের সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না এতদুর আসা।
গত ৬ বছরে তাঁর অধীনে জাতীয় দল মাঠে যে সুন্দর সময় কাটিয়েছে সেটিকে মনে করে তাঁর কথা, ‘অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না।’
দুই মিনিটের বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মাশরাফি। সেখানে তিনি ক্রিকেটের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা শুনিয়েছেন। জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়গুলোও সামনে আনেন। ৩৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনের পর মাশরাফির সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক পরে। মাঠ কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, ভক্তদের সঙ্গে ছিল সাংবাদিকরাও। স্মরণীয় মুহূর্তটা ক্যামেরাবন্দী করার চেষ্টা ছিল সবার মধ্যে।
মাঠের পাশটায় চলছিল জাতীয় দলের অনুশীলন। তিনটি নেটে অনুশীলন করছিল বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। মাশরাফিকে হেঁটে যেতে দেখে সবাই তাকালেন অধিনায়কের দিকে। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নেটের পেছনের দাঁড়িয়ে দেখছিলেন পুরো ঘটনাটি। অবাক দৃষ্টি তাঁর চোখে। অধিনায়ক মাশরাফি বাংলাদেশে কতটা জনপ্রিয়, সেটাই হয়তো প্রথমবার টের পেলেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান।
একটা অধ্যায়ের শেষ হচ্ছে। কিন্তু মাশরাফী থাকবে কোটি ভক্তের হৃদয়ে। টিমমেটদের চিন্তায়, চেতনায়, ব্যাটিং ও বোলিংয়ে। বাংলাদেশের আবেগের অপর নামই যে মাশরাফী।
মাশরাফীর কাছে পৃথিবীর যে কোন কিছুর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেয়া। এই গুরু দায়িত্ব এবার যার কাধেই পড়ুক তার জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন তিনি।