প্রাণঘাতী আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব এড়াতে হিমশিম খাচ্ছে সারা বিশ্ব। অচেনা ভাইরাসটির কারণে সারা বিশ্বে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ভয়াল ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের করোনা আক্রান্ত সকল দেশগুলো। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৯৫ টির মতো দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছুঁই ছুই। এর মধ্যে পাঁচ দেশে চীন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও জার্মানিতেই আক্রান্তের সংখ্যা শেষ সংবাদ পাও্যা পর্যন্ত ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৫ জন। আর এই পাঁচ দেশ সাথে ফ্রান্স ইরান সহ সাত দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ১১২ জনের।

চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। উহানে ভয়াবহ আকার ধারণ করার পর সারাবিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি। ইতোমধ্যে ১৯০টির মতো দেশে ছড়িয়েছেন অচেনা এই ভাইরাসটি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে সারা বিশ্বে ১৬ হাজার ৫৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত আড়াই মাসে সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮১ হাজার ৬৪৯ জন।
বর্তমানে রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৬২ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ১২ হাজার ৬২ জন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪২৯ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল ধরা হয় চীনের উহানকে। এখন পর্যন্ত সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছে দেশটির ওই প্রদেশেই। চীনে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ১৭২ জন, যা এককভাবে দেশ হিসেবে সর্বাধিক। মৃত্যুর হিসেবে ইতালির পরেই আছে চীনের স্থান। করোনায় দেশটির ৩ হাজার ২৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ৭৩ হাজার ১৬৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪ হাজার ৭৩৫ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক এক হাজার ৫৭৩ জন।

চীনে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। ইতালিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন চিকিৎসকসহ ৬ হাজার ৭৭ জন। দেশটির সর্বমোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭ হাজার ৪৩২জন। এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৪১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ২০৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এরই মধ্যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধসহ পুরো দেশটি লকডাউন করা হয়েছে।

ইতালি ও চীনের পর মৃত্যুর হারে তৃতীয় স্থানে আছে স্পেনে। এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের তালিকাতেও তিন নম্বরে আছে দেশটি। স্পেনে করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৩১১ জন। মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৫ হজার ১৩৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৫৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৯ হাজার ৪৭০ জন। এদের মধ্যে ২ হাজার ৩৫৫ জনের অবস্থা আশঙ্কজনক। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধসহ পুরো দেশটি লকডাউন করা হয়েছে।

স্পেনের পর করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ইরানে। দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৮১২ জন। মোট আক্রান্ত রোগীর সংখা ২৩ হাজার ৪৯ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৩৭৬। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২ হাজার ৮৬১ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কেউ নেই।

তালিকায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় পাঁচ নম্বর আছে ফ্রান্স। করোনায় দেশটির ৮৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্ত ১৯ হাজার ৮৫৫ জন। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২০০ জন। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ১৬ হাজার ৭৯৬ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ২হাজার ৮২ জন। ইতিমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে দেশটি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

করোনায় মৃতুহারের দিক থেকে ছয় ও সাত নম্বরে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ হাজার ১৪৫ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৫৮২ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৯৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪৫ হাজার ২৬৮ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১ হাজার ৪০ জন।

আর যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৫০ জন। মারা গেছেন ৩৩৫ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৬ হাজার ১৮০ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ২০জন। প্রথমে কয়েকটি রাজ্য লকডাউন করলেও এরই মধ্য এই দেশ দুটি পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া নেদারল্যান্ডস ২১৩, জার্মানি ১২৩ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই দেশগুলোর মোট এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৭৪৯ জন, ২৯ হাজার ৫৬ জন ও ৯ হাজার ৩৭ জন। তাছাড়াও অন্য দেশগুলোর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সুইজারল্যান্ড ১০৯, অস্ট্রিয়া ২১, নরওয়ে ১০, সুইডেন ২৫, বেলজিয়াম ৮১, ডেনমার্ক ১৫, কানাডা ২৭,পর্তুগাল ১৯, ব্রাজিল ২৫।
এদিকে বাংলাদেশেও মুক্ত নয় এ সর্বগ্রাসী মহামারীর ছোবল থেকে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৩৯, মারা গেছেন চার জন।

করোনা আক্রান্ত হয়ে সারা পৃথিবীতে যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের মধ্যে ১২ হাজার ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্খাজনক। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪২৯ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। এই মুহূর্তে সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৬২ জন।