ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাস জ্বরে চীন কেঁপে উঠে। বিশ্ব মিডিয়া চীনের সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। পশ্চিমা মিডিয়া তো এক কাঠি সরস তারা চীনা প্রেসিডেন্টের সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়েই ক্ষান্ত হয়নি, শি জিন পিংয়ের মুণ্ডুপাত করার জন্য সাঁতরানো শুরু করে।
চীনের বিপদে পাশে না দাঁড়িয়ে বিশ্ব মিডিয়া ব্যস্ত ছিল চীনের সরকার ব্যবস্থা, পলিটিকাল সিস্টেম কতটা ব্যর্থ সে দৃশ্যের অবতারণায়। শি চিন পিং কত বড় অথোরিটারিয়ান বা কর্তৃত্ববাদী শাসক সেটাই ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু।
চীনের জন্য গত বছরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১লা অক্টোবর কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর উদযাপন করে চীন, ছিল আরও নানা আয়োজন। ঠিক সে সময় আঘাত হানে করোনা ভাইরাস। আয়রন কার্টেইন বা লৌহ যবানিকার মত চীন শক্ত হাতে করোনা ভাইরাসের বহিঃপ্রকাশ রোধ করে সাফল্যের সাথে করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করে।
চীনে করোনা ভাইরাসের হানায় পশ্চিমারা উল্লসিত হয়ে উঠেছিল। তারা ভেবে নিয়েছিল আংকেল শি’র স্বর্ণযুগ শেষ হচ্ছে এবার! কিন্তু শেষ হইয়াও হল না শেষ! বীর দর্পে আংকেল শি ফিরে এসেছেন।
পশ্চিমারা বুঝতে পারেনি “নগরে আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না”! চীনে এই মুহুর্তে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার টানা তিন দিন যাবত শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। অন্যদিকে ইতালিতে একদিনে মারা গেছে ৬২৭ জন, সর্বমোট মারা গেছে ৪,০৩২ জন যা চীনের মৃত্যু সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। এ মুহুর্তে সারা বিশ্বে চীনা মেডিকেল ইকুইপমেন্টস থেকে শুরু করে চীনের ডাক্তার, নার্সদের চাহিদা বেড়ে গেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ২ কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছে চীন। বাংলাদেশকে সহায়তার ব্যাপারেও চীন সরকার তার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে।
কিছুক্ষণ আগে চীনা ধনকুবের জ্যাক মা টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি এশিয়ার দশটি দেশে মোট ১৮ লাখ মাস্ক, ২ লাখ ১০ হাজার টেস্ট কিট, ৩৬ হাজার প্রোটেক্টিভ স্যুট, ভেন্টিলেটর ও থার্মোমিটার পাঠাবেন।
কর্তৃত্ববাদী ডিক্টেটর আংকেল শি’র চীন করোনার বিরুদ্ধে সর্বাত্নক যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে বিশ্বের সকল জাতির আরও কাছে চলে আসলেন। যা তার ভবিষ্যৎ কূটনীতির পথকে আরও সুগম করে তুলবে। করোনা ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের সাথে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক সামনের দিনে আরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও একলা হয়ে পড়ল। করোনা ভাইরাস সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং বৃদ্ধি করলেও জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালির মত ক্ষতিগ্রস্ত দেশ সমূহকে চীনের আরও কাছে নিয়ে আসবে। ভাইরাস শুধু দূরে ঠেলে দেয় না, কাছেও টেনে নিয়ে আসে।
একই সাথে চীন সারা বিশ্বের সামনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো গণতন্ত্রের কী তাহলে দিন শেষ? গণতান্ত্রিক দেশ সমূহের নের্তৃবৃন্দ যখন করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে তখন শি চিন পিংয়ের কর্তৃত্ববাদী চীন করোনা সংক্রমণের হার শুন্যের ঘরে নামিয়ে এনেছে।
তাহলে কী কর্তৃত্ববাদী শি চিন পিং, পুতিনদের স্বর্ণযুগ শুরু হচ্ছে?
দিশেহারা ইতালি, স্পেন, জার্মান সকলেই এখন চীনের দ্বারস্থ হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী, কমিউনিস্ট ডিক্টেটর চীনা ডাক্তার, নার্সদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অসুখ সারাতে চায় বিশ্ব গণতন্ত্রের সোল এজেন্টধারী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা।
এ মুহুর্তে শি চিন পিং হয়ত মুচকি হেসে বলছেন, “তোমার গণতন্ত্রের সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষুধ দেবো কোথা?”
লিখেছেনঃ অপ্রস্তুত লেনিন