গতকাল থেকে বিভিন্ন ধরণের হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ফেসিয়াল মাস্ক কিনতে মানুষের উম্মাদনা দেখে আবারও পুরোনো কিছু কথা নতুন করে বলার প্রয়োজনবোধ করছি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত হাত ধোয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবং এক্ষেত্রে সবচে কার্যকর হল সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। যে কোন ধরণের সাবান, সেটা কাপড় কাঁচার সাবান হোক, বিউটি সোপ হোক, লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ হোক। হাত ধুতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে, নিয়ম মেনে, কমপক্ষে ২০-৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। পৃথিবীর কোন কোম্পানির সাবান এর চেয়ে কম সময়ে হাত থেকে জীবাণু দূর করতে পারে না। কোন কারণে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকলে বিকল্প হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এটি কোনভাবেই সাবানের চেয়ে ভালো বা সম পর্যায়ের না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার আবার দুই ধরণের আছে, এলকোহল বেসড এবং নন এককোহলড। WHO এবং CDC শুধু এলকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার অনুমোদন করে। আবার শুধু এলকোহল বেসড হলেই হবে না, তাতে কমপক্ষে ৬৫-৯৫ শতাংশ এলকোহল থাকা লাগবে। এখন আপনি আপনার কেনা হ্যান্ড স্যানিটাইজারটি পরীক্ষা করে দেখুন।
শুধু “It kills 99.99% germs” লেখা থাকলেই হবে না। দেখতে হবে সেটি এলকোহল বেইজড কিনা এবং এলকোহলের পরিমাণ কমপক্ষে ৬৫% কিনা। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ হ্যান্ড স্যানিটাইজারেই এই পরিমাণ এলকোহল থাকে না। অনেকে, বিশেষ করে উন্নত আয়ের দেশে ঘরে তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার হিসেবে ভদকা, হুইস্কি ইত্যাদি মদ দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাতেও কোন লাভ হবে না, কারণ এ ধরণের মদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০% এলকোহল থাকে। সাবান দিয়ে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া নিয়ে বিস্তারিত জানতে CDC এর ওয়েবসাইটে যেয়ে দেখে আসতে পারেন। লিংক: is.gd/indDSv



করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে ফেসিয়াল মাস্ক পড়তে হবে দুই দল মানুষের। একদল যারা করোনাভাইরাস বা একই ধরণের লক্ষণ প্রকাশ করেছেন, আরেকদল যারা এই ধরণের মানুষদের কাছাকাছি অর্থাৎ ৩ ফুটের মধ্যে যাচ্ছেন। বাকিদের ফেসিয়াল মাস্ক পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। এই ফেসিয়াল মাস্ক আছে দুই ধরণের, সার্জিক্যাল মাস্ক এবং এন ৯৫ গ্রেডের মাস্ক। আপনাদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি, বাজারে যত ধরণের এন ৯৫ গ্রেডের মাস্ক বিক্রি হচ্ছে তাদের অধিকাংশই স্রেফ কাপড়ের তৈরি প্রকৃতপক্ষে এন ৯৫ গ্রেডের নয়। এই ধরণের মাস্ক আপনাকে কোনভাবেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিবে না। ব্যবহার করতে চাইলে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে সার্জিক্যাল বা এন ৯৫, যে ধরণেরই হোক সেগুলো ব্যবহার করতে হবে সঠিক মানের, সঠিক সাইজের এবং সঠিক নিয়মে। মাস্ক ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত জানতে WHO এর ওয়েবসাইটে যেয়ে দেখতে পারেন, লিংক: is.gd/ECWIF6
যে জিনিসগুলো আমাদের সুরক্ষা দেয়ার কথা, সেগুলো মানসম্মত না হলে দ্বিগুন বিপদ। কারণ সেগুলো আপনাকে কোন ধরণের সুরক্ষা তো দিবেই না, বরং এগুলো ব্যবহার করলে আপনার মধ্যে যে “ফলস সিকিউরিটি” অনুভূত হবে সেটি আপনাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিবে। যেমন হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা মাস্ক আছে চিন্তা করে আপনি নিশ্চিন্তে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কারো ক্লোজড কন্ট্যাক্ট গেলেন এবং নিজেও আক্রান্ত হলেন। অথচ এগুলো না থাকলে কিন্ত আপনি আতংকের কারণে রোগীর কাছাকাছি যেতেন না। তাই হুজুগের বশে মানহীন, অপ্রয়োজনীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ফেসিয়াল মাস্ক কেনা বন্ধ করুন। নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখতে দায়িত্বশীল আচরণ করুন।
লিখেছেন- ডা. জাহিদুর রহমান, ভাইরোলজিস্ট
সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ।