করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কার ঐতিহাসিক মসজিদুল হারামে কাবা শরিফ চত্বরে প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কাবা শরিফ ধোঁয়া-মোছার কাজ চলছে বলে ব্রিটিশ দৈনিক সানডে এক্সপ্রেস বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামি পণ্ডিত ডা. ইয়াসির কাধি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় বলেছেন, সুবহান আল্লাহ, পবিত্র কাবা এখন জনমানবশূন্য। তাওয়াফ বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে কর্তৃপক্ষ হারাম শরিফ পরিষ্কার করছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।

মুসলিমদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা মক্কার পবিত্র গ্রান্ড মসজিদ। এই মসজিদের প্রাণকেন্দ্রে কাবা শরিফের অবস্থান। বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সৌদি আরব এর আগে বিদেশি এবং নিজ দেশের নাগরিকদের পবিত্র ওমরাহ পালন স্থগিতের ঘোষণা দেয়।

সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশি মাহমুদুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, হারাম শরীফে এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল, আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক।

তবে কাবা শরিফকে প্রথমবারের মতো জনমানবশূন্য দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। টুইটারে একজন লিখেছেন, আমার জীবনে প্রথমবারের মতো কাবা শরিফকে খালি দেখলাম। আরেকজন লিখেছেন, এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা, যা কল্পনার বাহিরে।

এর আগে সোমবার প্রথমবারের মতো সৌদিতে একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। পরে বুধবার আরও এক সৌদি নাগরিককে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

মক্কা, মদিনা এবং হজ্ব বিষয়ে সৌদি বিশেষজ্ঞ ডা. স্বামী আনগায়ি বলেছেন, আমার জীবদ্দশায় দেখা এই নিষেধাজ্ঞাকে সবচেয়ে কঠোর মনে হচ্ছে। তবে ইসলামের এক হাজার ৪০০ বছরের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন নয়। তবে মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্রের সুরক্ষায় সৌদি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে সাহসী এবং বুদ্ধিদ্বীপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, করোনাভাইরাস পর্যবেক্ষণ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দেশি এবং বিদেশিদের জন্য ওমরাহ পালন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রায় সারা বছর ধরেই ওমরাহ পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু পবিত্র হজ বছরে একবার পালন করেন বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম। প্রত্যেক বছরের জুলাইয়ের শেষের দিকে পবিত্র হজ্ব শুরু হয়।

সৌদি আরবের ডেপুটি হজ্ব মন্ত্রী আব্দুল ফাত্তাহ মাশাত বলেছেন, সৌদি আরবের নাগরিক এবং বাসিন্দারা এখনও মক্কা এবং মদিনার মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে ওমরাহ পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার ৩০৩ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এছাড়া এই ভাইরাস বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬ হাজার ৩৩৬ জন। তবে চীনের বাইরে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ইরান এবং ইউরোপের দেশ ইতালিতে। এ দুই দেশেই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০৭ জন করে মানুষের প্রাণ গেছে।