স্কুলের বার্ষিক বনভোজনের ফি ছিলো ২৫০ টাকা, তা থেকে ৫০ টাকা কম দেয়ায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কাজলী রানীর বই কেড়ে নেন নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার গাবরোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক। সে ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠে গোটা দেশেই। গতকাল পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া সেই ছাত্রীর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশন!
‘তোর টাকা দিয়ে কি আমরা মাছ মাংস খাবো? না তোর টাকায় চাকরি করি? যা তুই নিয়ে যা তোর মেয়েকে। দেখবো তুই কোথায় পড়ালেখা করাস।’- ৫০ টাকা কম দেয়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক এভাবেই অপমান করে স্কুল থেকে বের করে দেয় শিশু শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবাকে। ইতিমধ্যেই সেই প্রধান শিক্ষককে বদলি করেছে (৫ ফেব্রুয়ারী) স্থানীয় প্রশাসন, স্কুলেও যাচ্ছে শিশুটি। তবে দারিদ্রতার কারণে কাজল রানীর পড়াশোনার বন্ধ হয়ে যাবার শংকার বিষয়টি ভাবায় লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশনকে, এগিয়ে আসে তারা।
গতকাল (৯ ফেব্রুয়ারী) কাজলী রানী রায় ও তাঁর নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া বড় ভাই কাজল চন্দ্র রায়ের সাথে দেখা করে তাদের জন্য লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশন তাদের ‘দীপংকর দাস রাহুল শিক্ষাবৃত্তি’র আওতায় মাসিক শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করে। প্রতি মাসে দুই ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ বাবদ নিয়মিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করবে সংগঠনটি। কাজল-কাজলী সহ আড়াই বছর আগে চালু হওয়া লাইটারের এই শিক্ষাবৃত্তি সুবিধা পেয়েছে আটজন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে একজন শিক্ষার্থী গতবছর অনার্সে ভর্তি হয়েছেন, আরেকজন এবছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।



শিক্ষাবৃত্তি প্রদান সম্পর্কে জানতে চাইলে লাইটারের দায়িত্বশীল একজন জানান, “আমরা চাই কাজলী রানী রায় পরিপূর্ণ সুশিক্ষা পেয়ে বেড়ে উঠুক, বড় হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ পাক, জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করুক আমাদের সমাজকে।”
উল্লেখ্য, লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবৃত্তির বাইরেও অসংখ্য সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত আছে। প্রতি বছরের মত এবার শীতেও সংগঠনটি ৮০০’র বেশী কম্বল বিতরণ করেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে শহীদ মিনার নির্মাণ ও বন্যায় জরুরী ত্রাণ বিতরণের মত কাজগুলো করে থেকে। এছাড়াও স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন থেকে লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশন ‘মডেল ভিলেজ’ নামে একটি পাইলট প্রজেক্টের কাজ চলছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায়।