শামিমা নূর পাপিয়া! তবে পিউ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। তিনি নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই নেত্রীর প্রকাশ্য আয়ের উৎস গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে তিনি মূলত অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা করতেন। কোনো কাজ বাগিয়ে নিতে পাঁচ তারকা হোটেলে সুন্দরী তরুণীদের পাঠিয়ে মনোরঞ্জন করতেন সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিদের।

র‌্যাব বলছে, গত তিন মাসে তিনি শুধু ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলেই বিল দিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সবসময় তার নামে বরাদ্দ থাকত। হোটেলটির বারে তিনি প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। অথচ বৈধভাবে তার বার্ষিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব ব্যাপারে অনুসন্ধান করছিল র‌্যাবের একটি দল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শনিবার ২২(ফেব্রুয়ারি) সকালে তড়িঘড়ি করে দেশত্যাগের চেষ্টা চালান পাপিয়া। তবে সফল হয়নি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিন সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। ব্যাবের জিজ্ঞেস পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই পাঁচ তারকা হোটেল থেকে আরো চার নারীকে আটক করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কাজ করিয়ে আসছিলেন পাপিয়া ও তার স্বামী।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান, যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার কাছে থাকা মোবাইল ফোনে বেশ কিছু অশ্লীল ভিডিও পাওয়া গেছে। এরমধ্যেই কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তবে এই ধরণের ভিডিও যে কোনো নারীর জন্য আপত্তিকর ও অনৈতিক। 

র‌্যাব-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, পাপিয়ার আয়কর ফাইল তলব করে দেখা গেছে, সেখানে তিনি বছরে ২২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অথচ তাঁর প্রতিদিন বারের বিলই আসে আড়াই লাখ টাকা। এত টাকার উৎস কোথায়? জানতে চাইলে পাপিয়া র‌্যাবকে জানিয়েছেন, যাঁরা হোটেলে আসতেন, তাঁদের কাছে ‘মেয়ে’ পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এরপর অশ্লীল ভিডিও তুলে ওই সব ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। এ রকম সাতজন উঠতি বয়সী তরুণীর সঙ্গে র‌্যাবের কথা বলা সম্ভব হয়েছে, যাঁদের মাসে ৩০ হাজার টাকা করে দিতেন পাপিয়া। বিনিময়ে তাঁদের ব্যবহার করা হতো। কেউ রাজি না হলে তাঁদের লাঠি দিয়ে পেটাতেন পাপিয়া। আবার কোনো কোনো মেয়ের আপত্তিকর ছবি ‘বড়লোক’ কাস্টমারদের মুঠোফোনে পাঠিয়ে দিয়ে আগ্রহ তৈরি করতেন। এরপর ওই লোকগুলো এলে তাঁদের জিম্মি করা হতো।

মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, দেশে স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে তার বারের ব্যবসা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। তিনি স্ত্রীর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন। নরসিংদীর ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামের প্রতিষ্ঠানটির আড়ালে চলে মাদক ব্যবসা। জেলা শহরের বাইরে গেলে ক্যাডার বাহিনী তাকে বিশাল গাড়িবহরের মাধ্যমে মহড়া দিয়ে থাকে। অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অবৈধভাবে আয় করা টাকায় নরসিংদী ও ঢাকায় তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।

গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়ি্যবা ও সাব্বির খন্দকার। তাদের কাছে পাওয়া গেছে সাতটি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলংকান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোন।

পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা সবসময় পাপিয়ার সঙ্গে থাকতেন। তার ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব ও রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। পাশাপাশি তার সব অবৈধ ব্যবসা, অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি দিতে সহযোগিতা করতেন।

এ গঠনায় আজ সংগঠনটির সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নুর পাপিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২২ (ক) উপধারা অনুযায়ী দলীয় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছেন।