ডেংগুর সময় আমাদের দেশে ১৭ জন ডাক্তার মারা গিয়েছে, কেউ পালায়ে যায় নাই। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নিউজ হয় নাই, গরীব আর ছোট দেশ বলে। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে ছিলোনা, আমলরা দেশ ছেড়েছে। তবুও কোন ডাক্তার বলে নাই- এই রিস্কে আমি ট্রিটমেন্ট করব না, যেখানে আমার সহকর্মীরা মারা যাচ্ছে সেখানে থাকার রিস্ক আমি নিব না। মৃত্যু ভয় তাদের ও ছিল, তাদের ও টাকা ছিল দেশ ছাড়ার।

উহানে একজন ডাক্তার মারা গেছে ট্রিটমেন্ট করতে গিয়ে। একজন নার্সকে কাঁদতে দেখলাম যে, সে যদি এফেক্টেড হয় তার মাকেও সে দেখে যেতে পারবে না। কারণ পুরো শহর সীল করে দিয়েছে, যে কেউ যেতে কিংবা আসতে পারছে না।

যুদ্ধে যে ভয়াবহতা হয়, আমাদের বাংলাদেশের হসপিটাল গুলোতে ডাক্তারদের তার কাছাকাছি ভয়াবহতা দেখা লাগে। না, তারা হাজার হাজার রোগী দেখার পরেও অবভ্যাস্থ হয় না। যুদ্ধফেরত সেনা সদস্যের যেমন PTSD (post-traumatic stress disorder) হয়, ডাক্তারদেরও হয়। আগুনে পোড়া, গাড়ি এক্সিডেন্ট, ট্রমাটিক পেশেন্ট দিনের পর দিন দেখে যাওয়াও ভয়াবহ ব্যাপার। বিশ্বাস না হলে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ড থেকে ঘুরে আসতে পারেন বা ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট থেকে।

চীনে আমার শহর থেকে উহান (করোনাভাইরাস আক্রান্ত) ঢাকা-চট্টগ্রামের দুরত্ব, আর ওদের যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভাল বলে সেটা মাত্র দেড়ঘন্টার দুরত্ব। শুধু উহান না, আমার সিটিও লকডাউন। তারা কেউ ফিরতেও পারছে না, বেরও হতে পারছে না শহর থেকে।

এই আমরা যখন পালাচ্ছি, কিছু মানুষ হসপিটালেই আছে। চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মানে আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম, আমাদের রিসোর্স অনেক কম, আমাদের কোন সিস্টেম নাই। থাকলে হয়তো অন্যদেশের ডাক্তারদের মত আমাদের ডাক্তাররাও সম্মান, শ্রদ্ধা পাইতো। তাও সম্মান না দেন, শুধু মনে রাখবেন- আমাদের দেশেও কিছু মানুষ পেশার খাতিরে জীবন দিয়ে দিয়েছিলো।